ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশীর ‘বিনে পয়সার’ এসি, বিশ্বে তোলপাড়

২ডেস্ক রিপোর্ট ::

বিদ্যুৎবিহীন শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসি বানিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছেন বাংলাদেশী উদ্ভাবক আশীষ পাল।

স্রেফ ফেলে দেয়া বোতলকে কাজে লাগিয়ে ঘর ঠাণ্ডা রাখার দুর্দান্ত এক কৌশল উদ্ভাবন করেছেন তিনি।

বাতাস শীতল করার এই যন্ত্রটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ইকো-কুলার’ বা পরিবেশবান্ধব কুলার। খবর ইয়াহু নিউজের।

গ্রামের সাধারণ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন এই কুলার ব্যবহার করে ঘরের তাপ কমাতে পারেন স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত।

বিজ্ঞান অন্তঃপ্রাণ মানুষ আশীষ পাল পেশায় আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা গ্রের ক্রিয়েটিভ সুপারভাইজার। বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের মাথাতেই প্রথম বাসা বাঁধে ‘ইকো-কুলার’ তৈরির আইডিয়া।

এই প্রযুক্তি গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেয়ার জন্য পরীক্ষামূলক কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালের মার্চ মাসে। আশীষ পালসহ ১৫ জনের একটি দল নীলফামারী জেলার একটি গ্রামে যান। এবার গ্রের সঙ্গে যুক্ত হয় গ্রামীণ-ইন্টেল।

তারপর দুই প্রতিষ্ঠান মিলে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় পদ্মাপাড়ের একটি গ্রাম বেছে নেয়। এখন সেই গ্রামের বিভিন্ন ঘরে চলছে যন্ত্রটি বসানোর কাজ।বাংলাদেশীর 'বিনে পয়সার' এসি, বিশ্বে তোলপাড়নীলফামারী ডোমার উপজেলার ঘরে ঘরে এখন চলছে বিনে পয়সার এসি

নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার বড়গাছা গ্রামের পীযূষ কুমার রায় বলেন, ‘আমি কয়েক মাস ধরে ইকো-কুলার ব্যবহার করছি। বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ঘর বেশ ঠাণ্ডা রাখে যন্ত্রটি।’

উদ্ভাবক আশীষ পাল জানান, কয়েক বছর আগে তিনি ভারতের রাজস্থানের এক ‘হাওয়া মহলে’ ঘুরতে গিয়েছিলেন। সে মহলের একটি ব্যাপার তাকে খুব ভাবিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মহলের ঘুলঘুলি দিয়ে বাতাস ঢুকে কীভাবে ভেতরটা ঠাণ্ডা করে, সে সময়ে তার বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা তিনি খুঁজে পাননি। তবে তখন থেকেই বিষয়টি তার মাথায় ঘুরতে থাকে।

প্রতিদিনের ব্যস্ততায় দিন কাটে। বিষয়টি নিয়ে আর বেশি দূর এগোনো হয় না আশীষ পালের। তবে একদিনের এক ছোট ঘটনা এনে দেয় আলোর সন্ধান।

একদিন বাসায় তার মেয়েকে পদার্থ বিজ্ঞান পড়াচ্ছিলেন এক শিক্ষক। চাপের ফলে গ্যাস কিভাবে শীতল হয়, এই বিষয় নিয়েই তিনি কথা বলছিলেন।

বিষয়টি তাকে দারুণ উৎসাহী করে তোলে। এতদিন ধরে যে বিষয় নিয়ে ভাবছিলেন, তার অনেকটা উত্তর পেয়ে যান আশীষ পাল।

আশীষ তার ভাবনার কথা বলেন প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের সঙ্গে। এজন্য অফিসেই বানানো হয় টিনের তৈরি ঘরের কাঠামো। তারপর পরীক্ষা চালানো হয় কতটা কার্যকর তা বোঝার জন্য।

তারপর তারা রাজধানীর নিকেতন হাউজিং সোসাইটির একটি বাসার ছাদেও উদ্ভাবনের নানা দিক নিয়ে কাজ করলেন।  সেখানে পাওয়া সাফল্যের সূত্র ধরেই তারা ‘ইকো-কুলার’ প্রকল্পের পথে এগোলেন। এ পর্যন্ত ২৫ হাজার বাড়িতে এই ইকো-কুলার লাগানো হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে আশীষ পালের এই অভিনব উদ্ভাবন। ফরাসি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ফ্রান্স ২৪-এর রয়েছে ফরাসি, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় প্রচারিত তিনটি টেলিভিশন চ্যানেল।

টেলিভিশন সম্প্রচারের পাশাপাশি তিন ভাষাতেই রয়েছে তাদের ওয়েবপোর্টাল। সেখানে বিশ্বের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে মতামত প্রকাশের ওয়েবসাইট ‘অবজার্ভার’।

২ জুন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়েছে প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব কুলার উদ্ভাবনের খবর। শুধু ফরাসি এই সংবাদমাধ্যমেই নয়, ইকো-কুলার বানানোর পদ্ধতি নিয়ে তৈরি করা ভিডিও ফেসবুক, ইউটিউব আর ইকো-কুলারের ওয়েবসাইটের http://www.eco-cooler. com/ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। আর এ পর্যন্ত এই ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৮ লাখের বেশিবার।

পাঠকের মতামত: